সেরা ৫০টি গল্প (হার্ডকভার)

প্রফুল্ল রায়ের মতাে এমন কেগবর্ণময় জীবন খুব কমই দেখা যায়। বিপুল তাঁর অভিজ্ঞতা। দেশভাগের পর লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর সঙ্গে সীমান্তের এপারে চলে আসার পর ভারতবর্ষকে দেখার জন্য শুরু হয়েছিল তাঁর ক্লান্তিবিহীন যাত্রা। বিশাল এই দেশ, তার পাহাড়-পর্বত- নদী-সমুদ্র-অরণ্য মরুভূমি নিয়ে পরমাশ্চর্য নিসর্গ, তার প্রাচীন স্থাপত্য, তার বিচিত্র পুরাকীর্তি, তার মন্দির-মসজিদ-গির্জা-বৌদ্ধ বিহার, ঐতিহাসিক মিনার, স্মৃতিস্তম্ভ, এসব তাঁকে মুগ্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে মানুষ। কত ধরনের মানুষের সান্নিধ্যে যে তিনি এসেছেন তার লেখাজোখা নেই। গিরিজন, অরণ্যবাসী থেকে সমতলবাসী, দ্বীপবাসী, ক্ষমতালােভী ভ্রষ্ট জননেতা, ভণ্ড সাধু, ভূমিদাস, খাদ্যের খোঁজে ঘুরে বেড়ানাে হাভাতে নির্ভূম মানুষ, আন্দামানের সমুদ্র থেকে হাওরের সঙ্গে লড়াই করে শঙ্খ কড়ি টার্বো ট্রোকাস তুলে আনা শেল-কালেক্টর, গােয়ার সমুদ্রতীরের গণিকা, সেলুলার জেলের প্রাচীন বন্দি (স্বাধীনতার পর মুক্ত), দণ্ডকারণ্যে বনভূমি নির্মূল করে নতুন বসত গড়ে তােলা পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্ত, চোর, প্রতারক, লম্পট, দালাল, মুম্বাইয়ের ঝােপড়পট্ির নারকীয় পরিবেশে কোনােরকমে টিকে থাকা সারা ভারতের হতদরিদ্র মানুষ, গ্রামীণ যাত্রাদলের নটনটী, নৌটঙ্কির গায়ক, চোলাইয়ের কারবারী, নগণ্য শহরের প্রিস্টান ধর্মযাজক, ছুরির খেলা দেখানাে নাইফ প্রােয়ার, সিনেমার এক্সট্রা, শেষ বয়সে অর্থকষ্টে বিপন্ন একসময়ের সৎ স্বাধীনতা সংগ্রামী, কলগার্ল, জাগলার, ট্রাপিজের খেলােয়াড়, এমন অজস্র। এই সব মানুষের মধ্যে পিছিয়ে-পড়া নিরন্ন, ব্রাত্যজনের প্রতি লেখকের অপার সহানুভূতি। 'সেরা ৫০টি গল্প যেন মানুষের এক বিস্ময়কর চিত্রশালা। গল্পগুলি পড়লে পাঠক শুধু বাংলারই নয়, সারা ভারতবর্ষের হৃৎস্পন্দন অনুভব করবেন। এক ভারতবর্ষের মধ্যে কত রকমের ভারতবর্য যে লুকনাে রয়েছে, তারও সন্ধান পাওয়া যাবে।